আট বছর আগের কথা। বস্টনের ব্যস্ত একটি ক্লিনিকের ওয়েটিং রুম। ওয়েটিং রুমের আলোটা বেশ ম্লান। কোনো একটা অদ্ভুত কারণে কেন যেন দুনিয়ার সব দেশেই হাসপাতালের ওয়েটিং রুমের আলো বেশ ম্লান হয়। ক্যারেন খানিকটা উদ্বিগ্ন চোখে চারপাশে তাকালেন। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন তিনি। ক্যারেন এসেছেন তার ব্রেস্ট ম্যামোগ্রামের রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করতে। তার ম্যামোগ্রামের রিপোর্টে নাকি ‘সন্দেহজনক’ কিছু দেখা গিয়েছে। ক্যারেনের বয়স ৪০-এর ঘরে, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। ক্যানসার রোগটাকে সবসময়ই বয়স্ক মানুষের সমস্যা বলে মনে হতো তার। কিন্তু আজ সকালের এই ফোন কলটার ‘সন্দেহজনক’ শব্দটা তাকে হঠাৎ করেই বেশ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। ছয় মাস আগেই ডাক্তারের কাছে রেগুলার চেকআপ করিয়ে গিয়েছেন। তখন তো কিছু ধরা পড়েনি !
ক্যারেনের আশঙ্কাটা অমূলক ছিল না। আসলেই তার ডান স্তনে ছোট্ট একটি ক্যানসারাস টিউমার পাওয়া গিয়েছে। টিউমারটি এতই ছোট ছিল যে ছয় মাস আগের রেগুলার চেকআপে ধরা পড়েনি। ম্যামোগ্রামেও অস্বাভাবিকতা এতটাই নগণ্য ছিল যে তা অভিজ্ঞ রেডিওলজিস্টদেরও চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল। এবার একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন একটি সিস্টেম ক্যারেনের ম্যামোগ্রাম স্ক্যান করে বিশ্লেষণ করার পর ধরা পড়ে স্টেজ ১ স্তন ক্যানসার । তারপরই সেটা রেডিওলজিস্টের নজরে আসে। অনেক ক্যানসারের ক্ষেত্রেই রোগটা কি স্টেজ ১-এ ধরা পড়ছে, নাকি স্টেজ ৩-এ ধরা পড়ছে সেটা জীবন আর মৃত্যুর পার্থক্য করে দেয়। ক্যারেনের ক্ষেত্রে সৌভাগ্যই বলতে হবে, যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ক্যানসারটি রেডিওলজিস্টের নজরে আনে ।
ক্যারেনের গল্পটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। গত দুই দশকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা রোগ শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে নতুন নতুন সম্ভাবনার দিক খুলে দিয়েছে। ব্লাড টেস্ট, মল পরীক্ষা, এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, এবং এমআরআই টেস্ট রেজাল্ট বিশ্লেষণ করে দ্রুত নির্ণয় করা যাচ্ছে বিভিন্ন রোগ । বিভিন্ন গবেষণা বলছে, এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সমৃদ্ধ স্মার্ট সিস্টেমগুলো রেডিওলজিস্টদের সহায়তা করলে, শনাক্ত না করতে পারার ভুলে ক্যানসার ধরা না পড়ার চান্স ২০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে। ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে, এই ২০% জীবন-মৃত্যুর পার্থক্য করে দিতে পারে লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ার কারণে চিকিৎসা নিয়ে ক্যারেন গত আট বছর ধরে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন ।
প্রশ্ন হলো, একজন প্রশিক্ষিত রেডিওলজিস্ট যেখানে ক্যানসার নির্ণয়ে ভুল করলেন, এক বছর বয়সী একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সফটওয়্যার সেটা কী করে পারল? এর পেছনের কিছু সহজ যৌক্তিক ব্যাখ্যা রয়েছে। পাঠকের সুবিধার্থে এই ব্যাখ্যা একটা টেবিল আকারে নিচে দেয়া হলো :
ওপরের দেয়া কারণগুলো ছাড়া আরও বেশ কিছু কারণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার দিনে দিনে বাড়ছে। লক্ষ লক্ষ ডাটা দিয়ে প্রশিক্ষিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন সফটওয়্যার এখন অনেক ক্ষেত্রেই এমন নির্ভুলতার সাথে রোগ শনাক্ত করতে পারে যা দক্ষ মানব চোখকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। বাঁচছে ক্যারেনের মতো লক্ষ রোগীর জীবন।
এরপরও চিকিৎসা বিজ্ঞানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সম্পর্কে একটি বড় জিজ্ঞাসা রয়েই যাচ্ছে। তাহলে কি ভবিষ্যতে ডাক্তার বা রেডিওলজিস্টের প্রয়োজন পড়বে না? না, বিষয়টা মোটেও তা নয়। অবশ্যই পড়বে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আমরা ‘দ্বিতীয় জোড়া চোখ’ হিসেবে দেখতে পারি। এটি কাজ করবে, মানব দক্ষতার পরিপূরক হিসেবে। একজন বিশ্বস্ত সহকর্মীর মতো। আর চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করাতেই তো দায়িত্ব শেষ নয়। রোগীকে সঠিক চিকিৎসাদানের মাধ্যমে সারিয়ে তোলাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং সেখানে মানবিক স্পর্শের প্রয়োজন সবসময়ই থাকবে।
তাহলে স্বাস্থ্যসেবায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে আমাদের সংকোচের কারণ কী? যদিও কিছু ক্ষেত্রে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এটি এখনো গবেষণা পর্যায়ে। রোগ নির্ণয়ে ভুলভ্রান্তি, সঠিক ডাটার অভাবে বৈষম্যপূর্ণ ফলাফলসহ আরো বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। এ নিয়ে আবার পরে এক সময় লেখা যাবে।
রাঁধবি তুই! কিন্তু ফেসবুকে ফটো দিয়ে আমরা ক্রেডিট নেব
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে যা পেয়েছি তা কোনোদিন ভুলব না
কীভাবে একটি ছোট্ট গ্রাম ভারতের একটি ইউটিউব রাজধানী হয়ে উঠেছে?
মানবিক রোবট : এক নতুন যুগের সূচনা
হেলথকেয়ারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স : ভবিষ্যতের আশার আলো
জীবন থেমে থাকে না, বরং অন্যভাবে গল্প শুরু হয়
মনে হচ্ছিল আমার কোনো অঙ্গহানি হয়ে গিয়েছে
বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষন কথা বললাম
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছিল
দিনটায় আমি নিজেকে সময় দিতে পেরেছি
আপনি কোন সাহিত্যিকের কবিতা বা রচনা রোমান্টিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করেন?