জীবনজয়ীর আহ্বানে আমি একটানা চব্বিশ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট ছাড়া থাকতে সম্মত হই। এটা আমার জন্য ছিল অবিশ্বাস্য ব্যাপার। কারণ আমি সম্ভবত ইন্টারনেটে আসক্ত। ঘুমানোর সময় ছাড়া বলতে বাকি সময়টা আমি মোবাইল ফোনেই থাকি। নাই নেটে আমি রাজি হই আসক্তি থেকে একটু হলেও মুক্তি পাওয়ার আশায়। আমি ৮ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করি। তখন মনে হচ্ছিল আমার কোনো অঙ্গহানি হয়ে গিয়েছে। নিজেকে অসম্পূর্ণ লাগছিল বারবার। মোবাইলটা হাতে নিতে খুব ইচ্ছে করছিল। মোবাইল ছাড়া একাকিত্ব যেন নাছোড়বান্দার মতো আমাকে জড়িয়ে ছিল। এত নিদারুণ কষ্ট পাচ্ছিলাম, মনে হচ্ছিল পৃথিবীতে আমার মতো নিঃসঙ্গ কেউ নেই। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছিল।
আমি হলে রান্না করে খাই। বরাবর রান্না করার সময় গান শোনার অভ্যেস আমার। তাই মনে হচ্ছিল মোবাইলটা নিয়েই আসি। গান শুনি। শেষাবধি ব্যাপারটা সেদিকে গড়ায়নি। বরং গুনগুন করে গান গেয়ে রান্না করেছি পরে। রাত ১০টার দিকে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়েছিলাম যাতে নেটহীনতার একাকিত্ব কমে যায়। বন্ধুদের সাহচর্যে আসার পর অনেকটা ভালো লাগছিল। রুমে আসার পর আবারো মোবাইল হাতে নেওয়ার ইচ্ছে করছিল। তবে এই তাড়না শুরুর মতো তীব্র ছিল না। কী আশ্চর্য! এরপর খানিকক্ষণ বই পড়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সে রাতে ঘুম অনেকটা ভালো হয়েছিল।
সকালে উঠে আমি সাধারণত মোবাইল অন করে সোশ্যাল মিডিয়াতে যাই। তাই মোবাইল খুঁজছিলাম। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টার নাই নেটের জন্য আমি মোবাইল তালাবদ্ধ করে রেখেছিলাম ডেস্কে। ফলে সময় জানতে পারছিলাম না। আগের দিন সন্ধ্যা থেকে রুমমেটকে অন্তত ১০ বার জিজ্ঞেস করেছিলাম, “ক'টা বাজে?” সময় জেনে নিয়ে ফ্রেশ হলাম। রান্নাঘরে খাবার গরম করে খেয়ে নিলাম। বাড়ি যাওয়ার জন্য বাসের টিকিট কাটতে হতো, সিঙ্গেল সিটের জন্য ম্যামকে কল করতে হতো। এই চিন্তাগুলো মাথা থেকে বেরুচ্ছিল না।
দুপুরের দিকে মোবাইলের জন্য আকুতি খুব বেড়ে যায়। খাবার খেতে পর্যন্ত ইচ্ছে করছিল না। একবার মনে হলো আমি বোধহয় রোজা। সারা দিন খাবার আর পানি খাওয়া যাবে না আজ! কী থেকে কী যে ভাবছিলাম!
বিকেলে হলের মাঠে বসে রোদ পোহানোর সময় মনে হচ্ছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ আমাকে মেনশন করল কিনা! বন্ধুদের গ্রুপে কোনো মজার কথা হচ্ছে কিনা! হোয়াটসঅ্যাপে স্ট্যাটাস দিই সবসময়, সেই ব্যাপারটাও মনে আসছিল বারবার। যারা নক দেয় বা রিলস পাঠায় তাদের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছিল! সন্ধ্যায় রুমমেটকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম ঘড়ির কাঁটা সোয়া ছয়টা ছাড়িয়েছে। একটু সময় বই পড়লাম। আবার সময় জানতে চাইলাম। আরো কত দেরি সাতটা বাজার? কয়েকটা মিনিট যেন কত শত শতাব্দী মনে হচ্ছিল।
অবশেষে ৭টা ৫ মিনিটে মোবাইল হাতে নিলাম। সে এক অনুভূতি। সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে গেলাম, নোটিফিকেশন দেখলাম। গান শুনলাম, কিছু রিলস দেখলাম। বাড়িতে কল করলাম, সবার সাথে কথা বললাম। বারবার মনে হচ্ছিল হারানো বন্ধুকে খুঁজে পেয়েছি।
ইন্টারনেট মোবাইল ছাড়া আমার মিশ্র অনুভূতি হয়েছে। আমার মা এই ধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। আমার রুমমেট এবং বন্ধুরা আমার পাশে থেকেছে এবং অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। এই দিনটি বদৌলতে আমি এখন স্মার্ট ফোনের প্রতি আসক্তি কমানোর কথা ভাবতে পারছি।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে যা পেয়েছি তা কোনোদিন ভুলব না
কীভাবে একটি ছোট্ট গ্রাম ভারতের একটি ইউটিউব রাজধানী হয়ে উঠেছে?
মানবিক রোবট : এক নতুন যুগের সূচনা
হেলথকেয়ারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স : ভবিষ্যতের আশার আলো
টইটই করে দিনরাত এক করে ঘুরে বেড়িয়েছি
জীবন থেমে থাকে না, বরং অন্যভাবে গল্প শুরু হয়
মনে হচ্ছিল আমার কোনো অঙ্গহানি হয়ে গিয়েছে
বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষন কথা বললাম
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছিল
দিনটায় আমি নিজেকে সময় দিতে পেরেছি
আপনি কোন সাহিত্যিকের কবিতা বা রচনা রোমান্টিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করেন?