জার্মানিতে আউসবিল্ডুংয়ের সুযোগ


  • ইব্রাহীম খলিল  ফ্রাঙ্কফুর্ট, জার্মানি |
  • প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৫, ২০:৫৮
বিবিধ
ফোটোঃ এআই দিয়ে তৈরি

ভাষা শেখাটা জরুরি 

আউসবিল্ডুংয়ের (Ausbildung) হচ্ছে জার্মানির ভোকেশনাল প্রশিক্ষণের কর্মসূচি।  আউসবিল্ডুংয়ের জন্য কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করতে হয় না। মিনিমাম এইচএসসি পাস ও জার্মান ভাষা বি১/বি২ পাস করার পর কোম্পানিতে অ্যাপ্লাই করে আউসবিল্ডুং কন্ট্রাক্ট পেতে হয়। আউসবিল্ডুংয়ের এই সুযোগ মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের নেওয়া উচিত। যে জিনিসটা সবচেয়ে প্রয়োজন তা হচ্ছে জার্মান ভাষা শেখা। জার্মান ভাষা শেখা খুব সহজ নয়। তাই বলে অসম্ভবও নয়। 

বাংলাদেশ থেকে এই ভাষা শেখাটাও সহজ নয়। জার্মান সরকারের সহায়তায় একমাত্র Goethe Institute নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান যেখানে ভাষা শেখানো হয়। এছাড়া খুব অল্প বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আছে জার্মান ভাষা শিক্ষার। দেশ-বিদেশে কয়েকজন মেন্টর রয়েছেন যারা সুলভমূল্যে অনলাইন বা অফলাইনে শেখান। কেউ কেউ আবার ইউটিউবসহ অন্যান্য অনলাইন সোর্স থেকে শিখেও কৃতকার্য হয়েছে। যেভাবেই হোক না কেন ভাষা শেখাটাই মুখ্য বিষয়। ভালোভাবে ইউটিউব ফলো করলে অনেক সুন্দরভাবে ভাষার শাব্দিক বাচনভঙ্গি রপ্ত করা যায়। সেখান থেকে শব্দ সম্ভার নোট করে খাতায় লিখে শব্দ সংগ্রহের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়, ডায়লগ শেখা যায় ও পারফেক্ট উচ্চারণ শেখা যায়। জার্মান ভাষায় শিশুদের কার্টুন বা রূপকথা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মুভি, নিউজ ও ডিবেট আর এ১/এ২/বি১/বি২-এর যাবতীয় বিষয় বারবার দেখা প্রয়োজন। একই সাথে দরকার বিভিন্ন লেবেলের যে টেস্টগুলো দিয়ে নিজের মেধা যাচাই করা। 

অনলাইন  থেকে বরেণ্য ব্যক্তিদের সম্পর্কে জার্মান ভাষায় পড়লেও অনেক কিছু শেখা যায়। যারা বি১/বি২ লেভেলে আছে তারা প্রতিদিন একটি করে পড়লে দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। কবি, সাহিত্যিক,  দার্শনিক, বিজ্ঞানী, শিল্পী ও সংগীতশিল্পীদের জীবনী পড়লে একদিকে যেমন ভাষা শেখা যায়, অন্যদিকে নিজেকেও তথ্যসমৃদ্ধ করা যায়। কোনো নতুন শব্দ পেলে গুগল ট্রান্সলেটে গিয়ে শব্দের স্টক বাড়ানো যায়।

জার্মানিতে আমরা বাংলাদেশিরা সুখে-দুঃখে এক পরিবার। আমাদের এই পরিবার আরো বড় হবে তাই আমাদের চাওয়া। আমরা আহত হই যখন দেখি ভাষা শেখানোর কথা বলে কয়েকজন ইউটিউবার অবুঝ ছাত্রদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। এইসব ধুরন্ধর অনেক সময়  হালকা কায়দায় বলে যে তারা আউসবিল্ডুং পাইয়ে দেবে। এই প্রতারকদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। 

আউসবিল্ডুংয়ের অ্যাপ্লাই করার পরে কোম্পানির পক্ষ থেকে কল দেবে। আলোচনা করে মনঃপূত হলে তারা কন্ট্রাক্ট দেবে। সকল অশুভ শক্তিকে অতিক্রম করে মেধাবী ছাত্ররা আউসবিল্ডুং করতে আসবে এই প্রত্যাশা রইল। 


নার্সদের জন্য দারুণ সুযোগ 

২০২০ সাল থেকে বিশ্বের সকল দেশ থেকে জার্মান সরকার আউসবিল্ডুং করার সুযোগ করে দিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের নার্সদের জার্মানিতে ক্যারিয়ার গড়ার সুন্দর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আউসবিল্ডুং করে নিতে পারলে এরা জার্মানিতে উচ্চবেতনে কাজ করার সুযোগ, স্থায়ীভাবে বসবাস ও জার্মানির নাগরিকত্বও লাভ করতে পারবে। 

যে দেশ থেকেই একজন নার্স জার্মানিতে আসবেন তার অন্যতম প্রধান যোগ্যতাই হবে ভাষাজ্ঞান। কারণ রোগীদের পাশে সেবার জন্য দাঁড়াতে হলে, তাদের কথা বুঝতে হলে ভালোভাবে সেই ভাষা জানা লোক দরকার। এছাড়া চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সেবাপদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত জানার জন্য ভিনদেশিদের অবশ্যই তিন বছরের আউসবিল্ডুং করতে হবে।

বাংলাদেশ থেকে নার্সিংয়ে ডিপ্লোমা, বিএসসি, এমএসসি যা-ই করুক না কেন, সবাইকেই শুরুর পর্যায়ে থেকে শিখতে হবে তথা আউসবিল্ডুং করতে হবে। তবে নার্সিংয় পড়ে আসা ছাত্রছাত্রীরা যেহেতু  অনেক কিছুই অবগত, তাই তারা আউসবিল্ডুং করতে খুব একটা অসুবিধায় পড়বে না। 

অনেক প্রতিষ্ঠানে জার্মান ভাষা ই১ দিয়ে আউসবিল্ডুংয়ের অফার পাওয়া যায়, আবার কোথাও ই২ উল্লেখ করা থাকে। তাই যে যত ভালোভাবে ভাষা শিখে আসবে আউসবিল্ডুং পাস করতেও তার জন্য তত সহজ হবে। আউসবিল্ডুং হচ্ছে থিওরি ও প্রাক্টিসের সমন্বয়। তিন বছরের  আউসবিল্ডুং চলাকালীন অবস্থায় প্রথম বছর প্রায় ১১০০ ইউরো, দ্বিতীয় বছর ১২০০ ইউরো ও তৃতীয় বছর ১৩০০ ইউরো পাবে। ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এর সামান্য তারতম্য হবে। বাংলাদেশের খোদ নার্স ছাড়াও এইচএসসি, কারিগরি ডিপ্লোমা এবং ব্যাচেলারদেরও নার্সিং পেশায় আউসবিল্ডুংয়ের সুযোগ রয়েছে।

তিন বছর পরে পেশাগত জীবনে নার্সদের সুবর্ণ সুযোগ ও আকর্ষণীয় বেতন। সর্বনিম্ন ঘণ্টায় ২০ ইউরো ধরে ২২ দিন কাজ করলে তার বেতন বাংলাদেশি টাকায় পৌনে পাঁচ লাখ টাকার মতো আসবে। আর একটা বিষয় আছে শনিবার ডিউটি করলে প্রতি ঘণ্টার বেতন হবে দেড় গুণ। আর রবিবার বা সরকারি ছুটির দিন ডিউটি করলে দ্বিগুণ পাবে।

সাধারণত সিঙ্গেলদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ বা এর একটু বেশি ট্যাক্স হতে পারে। স্পাউস এলে ট্যাক্স আরো কম কাটা যাবে। সন্তান থাকলে আরো কম কাটা যাবে। উপরন্তু বাচ্চারা মাসে জনপ্রতি ২৫০ ইউরো পাবে। ১৮ মাস পর্যন্ত শিশুরা এর চেয়ে বেশি পাবে। 

ট্যাক্স কাটার পর যে টাকা হাতে থাকবে তাকে বেতনের নেটো (নিট বেতন) বলা হয়। এই ট্যাক্স চিকিৎসা, বেকার ভাতা, পেনশন ইত্যাদির জন্য নেওয়া হয়। 

আগ্রহীদের মনে রাখতে হবে যে কোনো দালাল আউসবিল্ডুং যোগাড় করে দিতে পারে না। নিজে অ্যাপ্লাই করে প্রতিষ্ঠান থেকে কন্ট্রাক্ট পেতে হয়। দেশে কিংবা বিদেশের অর্থলিপ্সু, যারা আউসবিল্ডুং পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেয় তাদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। 

 

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের কি আউসবিল্ডুং আসা উচিত? 

আউসবিল্ডুং হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা যা জার্মানিতে একটু দুর্বল ফলাফলের শিক্ষার্থীরা বেছে নেয়। তিন বছর এই ট্রেনিং করে তারা পেশাগত জীবনে সফলতা অর্জন করে। জার্মানিতেই অনেকের আউসবিল্ডুং নেই। তারা প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিজের দক্ষতায় বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। জার্মান নাগরিকদের ৪০ ভাগ পেশা বেছে নেওয়ার জন্য আউসবিল্ডুং করে। অর্থাৎ জার্মানিতে কারিগরি পেশাকে অবজ্ঞা করার কোনো অবকাশ নেই।

জার্মানিতে উচ্চ শিক্ষায় যেতে প্রায় ১২ হাজার ইউরোর ব্লকড অ্যাকাউন্ট করতে হয়। দেশটিতে প্রবেশের আগে এই অর্থ ব্যবহার করা যায় না। আউসবিল্ডুং করার জন্য কিন্তু এরকম কোনো বিধান নেই। বরং তিন বছর প্রশিক্ষণ চলাকালে যে টাকা দেওয়া হয় তা দিয়ে ভালোভাবেই চলা যায়। সেই সাথে একটা মিনিজব করলে পাঁচশ ইউরোর বেশি আয় করা যায়। এই সুবিধার কারণে আউসবিল্ডুং অনেক দেশের তরুণ-তরুণীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। 

প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা কেন কারিগরি শিক্ষার জন্য জার্মানিতে আসবে?

বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এমন অনেক শিক্ষার্থীর ১২ হাজার ইউরোর ব্লকড অ্যাকাউন্ট করার সামর্থ্য নেই। আবার বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়া মুখের কথা নয়। এই শিক্ষার্থীরা যদি দেশে ছাত্রাবস্থায় একটু জার্মান ভাষা শিক্ষা করে তাহলে আউসবিল্ডুং করে সুন্দর জীবন কাটাতে পারবে জার্মানিতে। আর ইচ্ছা থাকলে পরে কোনো একসময় উচ্চশিক্ষাও করা যাবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে বিধায় কারিগরি প্রশিক্ষণে জীবন গড়লে ক্ষতির কিছুই নেই; লজ্জার কিছু নেই। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে ৪০ ভাগ জার্মানির নাগরিক আউসবিল্ডুং করে পেশা বেছে নেয়। 



ক্যাটাগরি: বিবিধ

         

  রেটিং: ০

এই বিভাগের আরও পোস্ট

রসিঘর

রাঁধবি তুই! কিন্তু ফেসবুকে ফটো দিয়ে আমরা ক্রেডিট নেব

  • মোঃ ইমরুল ইউসুফ|
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: রসিঘর

ক্যাম্পাস

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে যা পেয়েছি তা কোনোদিন ভুলব না

  • সজীব কুমার মন্ডল |
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: ক্যাম্পাস

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

কীভাবে একটি ছোট্ট গ্রাম ভারতের একটি ইউটিউব রাজধানী হয়ে উঠেছে?

  • খাদিজা আক্তার |
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

মানবিক রোবট : এক নতুন যুগের সূচনা

  • বর্ষা রানী দে|
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

হেলথকেয়ারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স : ভবিষ্যতের আশার আলো

  • অর্ণব মিত্র উৎসব|
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

সর্বশেষ

সবচেয়ে পঠিত

মনে হচ্ছিল আমার কোনো অঙ্গহানি হয়ে গিয়েছে

মনে হচ্ছিল আমার কোনো অঙ্গহানি হয়ে গিয়েছে

  • সুরাইয়া সারমিন , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষন কথা বললাম

বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষন কথা বললাম

  • উসরাত জাহান নিতু , বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছিল

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছিল

  • ইমরান চৌধুরী , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

দিনটায় আমি নিজেকে সময় দিতে পেরেছি

দিনটায় আমি নিজেকে সময় দিতে পেরেছি

  • আশা আক্তার জুঁই , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

আজকের জরিপ 01

আপনি কোন সাহিত্যিকের কবিতা বা রচনা রোমান্টিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করেন?