অনেক দিন পর চিঠি লিখতে বসে গেলাম


  • ড. শিমুল বাড়ৈ   শিক্ষক, ফজিলাতুননেছা সরকারি মুজিব কলেজ, গোপালগঞ্জ |
  • প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৭
নাই নেট
ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

পহেলা ফেব্রুয়ারি। সকালে ঘুম ভাঙতেই প্রথমে চেনা অভ্যাসে হাতটা চলে গেল বালিশের কাছে। কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি নেই। মুহূর্তে চমকে উঠলাম। হারিয়ে যাবার শঙ্কায় তৎক্ষণাৎ বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম। তখনই মনে পড়ল রাতে শোবার আগে জীবনজয়ী নাই নেট আহবানে সাড়া দিয়ে এক অভিনব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। চব্বিশ ঘণ্টা ইন্টারনেট ছাড়া থাকবো। সিদ্ধান্ত মোতাবেক মোবাইলের সুইচ বন্ধ করে ড্রয়ারটায় রেখে দিয়েছিলাম। শুধু তাই নয়, ওয়াইফাই রাউটারের পাওয়ারও বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলাম। ঘরে থাকা স্মার্ট টিভিটিও ইন্টারনেটসংযোগ হারায়। 

মোবাইল কোথায় আছে মনে পড়তেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। ধীরে ধীরে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। ঘরের দেয়ালে ঝুলে থাকা পুরোনো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়টা দেখে নিলাম। প্রতিদিনের মতোই প্রাতরাশ করার জন্য প্রস্তুত হলাম। তবে আজ সকালে একটি নতুন অভ্যাস যোগ হলো। সদর দরজার কাছে গিয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে হকারের রেখে যাওয়া দৈনিক পত্রিকাটা হাতে তুলে নিলাম।

অনেক দিন ধরেই পত্রিকার কাগজের স্পর্শ ভুলতে বসেছিলাম। যত খবর, যত তথ্য, সব মুঠোফোনের স্ক্রিনেই দেখে নিতাম। কিন্তু আজকের দিনটা একটু ভিন্ন। হাতে পত্রিকা নিয়ে ফিরে এসে চেয়ারে বসলাম। পত্রিকার পৃষ্ঠাগুলো ওলটাতে ওলটাতে একটা নতুন অনুভূতি হচ্ছে। যেন হারিয়ে যাওয়া কোনো বন্ধুর সঙ্গে আবার দেখা হলো। খবর পড়তে পড়তে মুগ্ধ হয়ে গেলাম কাগজের গন্ধ আর স্পর্শে।

পত্রিকার পাতায় চোখ বুলাতে গিয়ে দেখলাম, কত কিছু আমি আগে কখনোই পড়ে দেখিনি। যে বিজ্ঞাপনগুলো আগে তুচ্ছ মনে হতো, আজ সেগুলোকেও যেন অন্যরকম মনে হচ্ছে। ছোট ছোট খবর, বিশেষ প্রতিবেদন, কার্টুনসবই নতুন মনে হলো। মনে হলো, আমি যেন আরেকটি ভুবনে প্রবেশ করেছি, যেখানে সবকিছু ধীর লয়ে ঘটে। 

পত্রিকা পড়ার পর সকালের নাস্তা সেরে চায়ের কাপে চুমুক দিলাম। এই শান্তি যেন অনেক দিন পাইনি। এমনকি বিশেষ প্রয়োজনের জন্য আজ টিএন্ডটির টেলিফোনেই ভরসা করতে হলো। দুটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ফোন করলাম, তবে সেগুলো করেছি ল্যান্ডলাইনে। ডিজিটাল বা ইন্টারনেটের কোনো প্রয়োজনই পড়ল না। এই ছোট্ট বিষয়গুলোও আজ যেন এক বিশেষ অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়াল।

দুপুরের খাবার শেষে অনেক দিন পর চিঠি লিখতে বসে গেলাম। শেষ কবে চিঠি লিখেছি, তা স্মৃতিতে নেই। আমেরিকায় থাকা সন্তানের সঙ্গে সব সময়েই মুঠোফোনে কথা হয়। এসএমএস পাঠাই। কিন্তু আজ তাকে একটি চিঠি লিখলাম। চিঠি লেখার সময় যে অনুভূতি হলো, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। প্রতিটি শব্দ লিখতে গিয়ে অনুভূতিগুলো যেন ফিরে আসছিল। বারবার চোখ ভিজে যাচ্ছিল। চিঠির শেষে সই করার সময় মনে হলো, এই চিঠি হয়তো একদিন ছেলের হাতেও একই রকম অনুভূতি এনে দেবে।

বিকেলে ব্যালকনিতে বসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কাব্যগ্রন্থ খুললাম। বইয়ের পাতাগুলো উল্টাতে উল্টাতে মনে হলো, কত বছর হলো কোনো বইয়ের আসল পাতা হাতে ধরা হয়নি। বইয়ের পিডিএফ পড়ে পড়ে হয়তো অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু সেই আসল বইয়ের স্পর্শ আর গন্ধএই অনুভূতি অমূল্য। প্রতিটি শব্দ যেন জীবন্ত হয়ে উঠছিল। সূর্যের আলো ব্যালকনিতে পড়ছিল, আর আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম কাব্যের জগতে।

সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত এলো। সারাদিন কোনো ইন্টারনেট, মুঠোফোন বা স্মার্ট ডিভাইস ছাড়া কাটালাম। কিন্তু সেই অভাব অনুভব করিনি। বরং এই দিনটি আমাকে নিজের সঙ্গে একান্ত সময় কাটানোর সুযোগ করে দিল। রাতের খাবার শেষে বিছানায় শুয়ে যখন দিনটি ভাবছিলাম, মনে হলো, এই অভিজ্ঞতা এক নতুন শিক্ষা। জীবনের ছোট্ট জিনিসগুলোতে যে আনন্দ, তা প্রযুক্তির দুনিয়ায় প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।

কখনো কখনো জীবনের দৌড় থামিয়ে একটু থেমে শ্বাস নেওয়া, বই পড়া, চিঠি লেখা বা প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটানোএটাই বোধহয় জীবনের আসল সৌন্দর্য। এই দিনটি সেই সৌন্দর্যকেই নতুনভাবে চেনালো। 


ক্যাটাগরি: নাই নেট

         

  রেটিং: ০

এই বিভাগের আরও পোস্ট

রসিঘর

রাঁধবি তুই! কিন্তু ফেসবুকে ফটো দিয়ে আমরা ক্রেডিট নেব

  • মোঃ ইমরুল ইউসুফ|
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: রসিঘর

ক্যাম্পাস

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে যা পেয়েছি তা কোনোদিন ভুলব না

  • সজীব কুমার মন্ডল |
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: ক্যাম্পাস

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

কীভাবে একটি ছোট্ট গ্রাম ভারতের একটি ইউটিউব রাজধানী হয়ে উঠেছে?

  • খাদিজা আক্তার |
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

মানবিক রোবট : এক নতুন যুগের সূচনা

  • বর্ষা রানী দে|
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

হেলথকেয়ারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স : ভবিষ্যতের আশার আলো

  • অর্ণব মিত্র উৎসব|
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

সর্বশেষ

সবচেয়ে পঠিত

মনে হচ্ছিল আমার কোনো অঙ্গহানি হয়ে গিয়েছে

মনে হচ্ছিল আমার কোনো অঙ্গহানি হয়ে গিয়েছে

  • সুরাইয়া সারমিন , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষন কথা বললাম

বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষন কথা বললাম

  • উসরাত জাহান নিতু , বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছিল

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছিল

  • ইমরান চৌধুরী , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

দিনটায় আমি নিজেকে সময় দিতে পেরেছি

দিনটায় আমি নিজেকে সময় দিতে পেরেছি

  • আশা আক্তার জুঁই , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

আজকের জরিপ 01

আপনি কোন সাহিত্যিকের কবিতা বা রচনা রোমান্টিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করেন?