আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা বৃহত্তর পাবনা অঞ্চলে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্বনামধন্য বিভাগ থেকে। ক্যাম্পাসে, জীবন যেখানে আনন্দের ডালি খুলে বসে, আমার যে সময় কেটেছে তা নিতান্তই দুর্ভাগ্য ও নির্বুদ্ধিতাপ্রসূত। আমি পরিপার্শ্ব ও স্বার্থান্বেষী বন্ধুদের মায়াজালে জড়িয়ে পড়ি মাদকের ভয়াল থাবায়। নিজেকে নিয়ন্ত্রণের হাজারো উপায় অবলম্বন করেও থামাতে পারিনি মাদকের নির্ভরতা। মাদক ও আমি মিলেমিশে এক হয়ে যাই দীর্ঘ সময়; যা কাটিয়ে উঠতে এখনও হিমশিম খেতে হয়। আত্মোপলব্ধি ও আসক্তির স্বরূপ উপলব্ধি না হলে হয়তো এখনও সেই বিভীষিকাময় রাতদিন কাটানো লাগত। আমি সৌভাগ্যবান যে সৃষ্টিকর্তার দয়ায় এখন স্বাভাবিক ও সত্যিকার সুন্দর জীবন উপভোগ করি। আর দশজন সাধারণ আসক্ত মানুষের মতোই আমিও হতাশা ও ব্যক্তিজীবনের অপূর্ণ আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন না ঘটায় বিকল্প সুখের অন্বেষণ থেকেই মাদক নিতে অগ্রসর হই। তাতে আমার পারিপার্শ্বিক অবস্থাও সমানভাবে দায়ী। প্রত্যেক আসক্ত ব্যক্তিই কারও না কারও কাছে থেকে এটা প্রথম শিখে থাকে। যাদের সহানুভূতি প্রদর্শন করার কথা থাকে তারাই ধরিয়ে দেয় মাদকের জাদুর বাক্স, যার কালোজাদু হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে বাস্তবতা থেকে আরো দূরে সরিয়ে দেয়।
মাদক নির্ভরতা হঠাৎ এক মুহূর্তে কাটিয়ে ওঠা যায় না। নির্ভরতার সৃষ্টিটাও শুরু হয় অভ্যাসে। অন্যান্য অভ্যাসের মতো এই অভ্যাস চাইলেই সময় ধরে কাটানো সম্ভব না। আমিও পারিনি। অনেকবার দফায় দফায় ছেড়ে দিলেও পুনরায় নিতে বাধ্য হই। আমার অনুভূতি ও ভালো লাগার হিসাব-নিকাশ পুরোপুরি না মিলানো পর্যন্ত মাদকেরই দাসত্ব করেছি। মাদক নির্ভরতা শুরুর প্রথম পর্যায়ে প্রচণ্ড পাপবোধ কাজ করে, যেই উপলব্ধি আস্তে আস্তে লীন হয়ে যায়। পরে আস্তে আস্তে মাত্রা বাড়তে থাকে একই সাথে এই পাপবোধটাও স্তিমিত হতে হতে থেমে যায়। আমিও এই পর্যায়ে আসক্তিটাকে উপভোগ করতে থাকি।
যেসব সঙ্গী-সাথির সাথে সাধারণত মাদক গ্রহণ করা হয় তারাও একজন মাদকসেবীর জীবনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। কোনো আসক্ত বন্ধু চাইবে না তার একজন বন্ধু তার মতো না হোক। এমন বন্ধুর সংখ্যা থাকলেও নিতান্ত কম। এক পর্যায়ে ক্রমশই আমার সঙ্গী-সাথির বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করি যা নিজের জীবনের সাথে মিলানো অত্যন্ত কঠিন, যেমন নিজের ভুল বা পরিবর্তন সহজে ধরা যায় না। এই ছোট ছোট বিষয়কে আমি ইন্ডিকেটর বানিয়ে নিজস্ব ধারায় ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে থাকি। আমি ছোটবেলা থেকেই একজন ভালো পর্যবেক্ষক। ক্রমেই আমি আমার পূর্বের ও বর্তমান সময়ের পার্থক্যগুলো ধরে ফেলতে পারি। মানুষ প্রকৃতির ভিতর যখন অপ্রাকৃতিকভাবে জীবন নির্বাহ করে তখনি তার দুঃখের সূত্রপাত ঘটে যা বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে আর উদাহরণ দেওয়ার দরকার পড়ে না। তবে সবকিছু থেকে বের হওয়া আর মাদক থেকে বের হওয়া এক কথা নয়। যা আমাকে শান্তি দেয়, আমার স্বাভাবিক হতাশা দুর্দশার মুহূর্ত থেকে রেহাই দেয় তার বাহুডোর থেকে বের হয়ে আসা মুখের কথা না। মায়ার মতো পিছুটান থেকেই যায় যা প্রকৃত স্বাভাবিক জীবন থেকে দূর থেকে আরও দূরে ঠেলে দেয়।
শেষে রূপকথার মতো জীবন বদলে যাবে এমন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে মনকে বুঝিয়ে থাকে মাদক ছেড়ে দিতে চাওয়া সকল আসক্ত ব্যক্তি। বাস্তবে যা কখনোই ঘটে না। আসক্ত বন্ধু-বান্ধব ও পরিপার্শ্ব ত্যাগ করে কিছুদিন কাটিয়ে আবার যখন হতাশ হয়েছি, মুখ থুবড়ে পড়েছি, বাধাগ্রস্ত হয়েছি, পুনরায় হতাশ হয়েছি আবারও ফিরেছি মাদক মরীচিকার খপ্পরে। এভাবেই মূলত চলে ছাড়া আর পুনরায় ধরার চক্র। এগুলো করেও বুঝতে চেষ্টা করেছি জীবনের কোন পর্যায়ে, কোন ঘটনাপ্রবাহগুলো বারবার আমাকে ফিরিয়ে এনেছে। তবে হাল ছেড়ে নিজেকে মাদকের কাছে বিলিয়ে দিইনি অকাতরে। প্যাটার্ন বা চক্রগুলো আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে আমি কেন মাদকের প্রতি নির্ভর হই, এই বিষয়টা থেকে আমি সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছি। প্যাটার্নটা একবার ধরতে পারলেই যে কাজ শেষ হয়ে গেল তা কিন্তু নয় তবে এটাই মূল জায়গা। এবার এগিয়েছি প্যাটার্নগুলোর অভ্যাস কাটানোয়। এটা সময়সাপেক্ষ; একবারে বা একমুহূর্তে সম্ভব না কখনোই। তবে নিজের বুঝ-জ্ঞান যত পাকা হবে, মানসিক দৃঢ়তা যত মজবুত হবে তত সহজ হবে।
একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি যতই নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখুক আর যা কিছু দিয়েই তার মাদকের স্বাদ প্রতিস্থাপন করার চেষ্টা করুক সে ফিরে আসতে বাধ্য হবেই। কারণ, মূল সমস্যা মনে। আগে শরীরকে বাগে আনতে হয়েছে আমাকে, তারপর মন। শরীরও সহজে পুরাতন আসক্তির অভ্যাস ছাড়তে পারে না, মেজাজ খিটখিটে হয়ে, বিষণ্নতা দেখা যায়। ঠিক তখনই সদ্য ছেড়ে আসা আসক্ত ব্যক্তি পুনরায় আবার তার শরীরে পুরনো সুখের বাতি জ্বালে। আর থাকে মন, সে কেন চাইছে এমন জিনিস যা শরীরের জন্য ভালো না, কী-ই বা এমন পাচ্ছে যা তাকে সব ভুলিয়ে তৃপ্ত করছে? এগুলো মনের সূক্ষ্ম ভাবাবেগের সাথে তুলনা করলে স্বাভাবিক এবং অস্বাভাবিক জীবনের পার্থক্য নিরূপিত হয়। যেটা করতে পারলে আসক্ত থেকে অনাসক্ত হওয়ার পথটা অনেক সহজ হয়ে যায়; যা আমার ক্ষেত্রে হয়েছে। সক্রেটিসের ভাষায় নিজেকে চিনলে সব চেনা হয়ে যায়। নিজের সাথে সবকিছু মিলিয়ে ধরতে গেলেই বোঝা যায় মাদক ভয়ংকর মরীচিকা যা আসলে সুখ দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। যার জন্য কায়মনোবাক্যে ব্যস্ততা ও ব্যাকুলতা মরুভূমির মরীচিকার চেয়েও অবাস্তব। এই মোহ কাটাতে চাই আন্তরিকতা, দৃঢ় মানসিকতা এবং দায়িত্ববোধ দিয়ে। আসল বাঁচার শুরু এখান থেকেই।
[লেখকের নাম পরিবর্তিত]
রাঁধবি তুই! কিন্তু ফেসবুকে ফটো দিয়ে আমরা ক্রেডিট নেব
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে যা পেয়েছি তা কোনোদিন ভুলব না
কীভাবে একটি ছোট্ট গ্রাম ভারতের একটি ইউটিউব রাজধানী হয়ে উঠেছে?
মানবিক রোবট : এক নতুন যুগের সূচনা
হেলথকেয়ারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স : ভবিষ্যতের আশার আলো
জীবন থেমে থাকে না, বরং অন্যভাবে গল্প শুরু হয়
মনে হচ্ছিল আমার কোনো অঙ্গহানি হয়ে গিয়েছে
বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষন কথা বললাম
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছিল
দিনটায় আমি নিজেকে সময় দিতে পেরেছি
আপনি কোন সাহিত্যিকের কবিতা বা রচনা রোমান্টিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করেন?