বর্তমানে স্পেনে বাংলা সাংবাদিকতা বেশ বিকশিত। এর পিছনে কাজ করছে একদল তরুণের উচ্ছ্বাস ও নিরলস কর্মকাণ্ড। দেশের সাথে তুলনা করলে এই সাংবাদিকেরা পারিশ্রমিক বা সন্মানী বলতে তেমন কিছুই পান না। তবু স্পেনে বাঙালি কমিউনিটির স্বার্থে বাংলাদেশের স্বার্থে এই তরুণ সাংবাদিকদের অবদান একদিন গবেষণার বিষয় হবে, যেমনটি হয়েছে বিলেতে বাংলা সাংবাদিকতা নিয়ে। 

স্পেনে ২০০০ সালের আগে হাতেগোনা কিছু বাঙালি বাস করত। সে বছর স্পেন সরকারের রেসিডেন্স সংক্রান্ত নতুন আইনের আওতায় বহু অবৈধ অভিবাসী বৈধ হওয়ায় সুযোগ পায়। স্পেন সরকারের এই উদার নীতির ফলে কয়েক হাজার বাঙালি ওয়ার্ক পারমিট ও রেসিডেন্স পারমিট পায়। এরপর থেকে স্পেনের বড় বড় শহরে বাঙালি কমিউনিটি বড় হতে থাকে। কাজকর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য ও পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাসের সুযোগ বাড়তে থাকে। মাদ্রিদ ও বার্সেলোনায়  বাঙালি কমিউনিটির ভিত্তি সবচেয়ে মজবুত। 

প্রবাস জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি কান্না ও যাপিত জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরার জন্য স্পেনে বাঙালি সাংবাদিকরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এই সাংবাদিকতার সূচনা ঘটে হাতেলেখা পত্রিকার মাধ্যমে। এরপর কিছু তরুণ সাংবাদিক ছোটখাটো উদ্যোগ নিয়েছেন। আর্থিক সংকটে হোঁচট খেতে হয়েছিল তাদের।  

২০০৬ সালে মাদ্রিদে প্রেসে ছাপানো একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। নাম দেওয়া হয়েছিল  ‘The 21th February’, যা পরে ‘একুশে’ নামে প্রকাশ হতো। মাদ্রিদ কমিউনিটির খবর এবং দেশ-বিদেশের নানা তথ্য নিয়ে এ পত্রিকার আগমন বেশ ভালো সাড়া জাগিয়েছিল কমিউনিটিতে। 

পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন শাহ জামাল আহমেদ ও নির্বাহী সম্পাদক মিনহাজুল আলম মামুন। ধীরে ধীরে এই পত্রিকার সাথে জড়িত হন মাসুদ আলম, ইব্রাহীম খলিল, শফিকুল ইসলাম শিপলুসহ অনেকে। সকলের আত্যন্তিক চেষ্টায় ‘একুশে’ পত্রিকা মানোন্নয়ন হতে থাকে লক্ষণীয়ভাবে। জিদ্দি চৌধুরী, মাসুম আলম, নুরুল আলমসহ আরো অনেকে লেখা দিয়ে পত্রিকাটি সমৃদ্ধ করেছেন। মাদ্রিদে বাঙালি কমিউনিটিতে সর্বজন শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক এ কে এম জহিরুল ইসলাম এ পত্রিকায় সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন  না। তবে মাঝে মাঝে প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখে ভালো সহযোগিতা করেছেন। স্পেনে আর্থিক মন্দা দেখা দিলে ‘একুশে’ পত্রিকার মতো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ফলে কয়েক বছর পর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। 

এরপর প্রবাস কণ্ঠ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর প্রধান সম্পাদক ছিলেন এ কে এম জহিরুল ইসলাম, সম্পাদক হাসান আবুল খায়ের ও নির্বাহী সম্পাদক জাকির বেপারী। পরে ইব্রাহীম খলিল নির্বাহী সম্পাদক হন। কিছুদিন চলার পর আর্থিক সংকটে এ পত্রিকাও বন্ধ হয়ে যায়।

নানা প্রতিকূলতা ও ঘাত-প্রতিঘাতের পরও মাদ্রিদে প্রেস সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়নি। এক পর্যায়ে এ কে এম জহিরুল ইসলামের সাথে এগিয়ে এলেন ইব্রাহীম খলিল। অনেক প্রত্যাশা ও প্রত্যয় নিয়ে ‘দেশ কণ্ঠ” নামে একটি পত্রিকার জন্ম দিলেন। এই পত্রিকা কমিউনিটি ও  বাংলাদেশের খবরা-খবরের সাথে সাথে আন্তর্জাতিক তথ্য পর্যালোচনা গুরুত্ব দেয়। 

স্পেনে নানা সময়ে অনেকেই আগ্রহ করে পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু পত্রিকাগুলো নিয়মিত চালানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কিছু পত্রিকা দু-একটি সংখ্যার বেশি প্রকাশ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। 

নানা প্রতিকূলতা ও আর্থিক সংকট সত্ত্বেও বলতে গেলে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে ‘দেশ কণ্ঠ’ পত্রিকাটি চালাতে হয়। কমিউনিটিতে নতুন লেখক তৈরি করার অভিপ্রায় নিয়ে, কমিউনিটির সেবায় দেশকণ্ঠ পত্রিকা নানা প্রতিকূলতার মধ্যে এগিয়ে চলছে। দবির তালুকদার, সাইফুর রহমান, ইকবাল হোসেন, মামুন হাওলাদার, জাকির হোসেন মিন্টু, কামরুজ্জামান মাসুম, সাজেদা আক্তার, তাহমিনা আক্তারসহ অনেকে লিখছেন এই পত্রিকায়। ফখরুদ্দিন রাজি, কামাল মজুমদার ও ইব্রাহীম খলিলের কবিতা কাব্যশৈলীর এক অভিনব ধারার সন্ধান দিয়েছে।

যুগের চাহিদা মাথায় রেখে দেশ কণ্ঠ পত্রিকা কিছু খবরের ভিডিও ভার্সন তৈরি করছে। অল্প সময়ের মধ্যে এই আয়োজনটি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।