রাঁধবি তুই! কিন্তু ফেসবুকে ফটো দিয়ে আমরা ক্রেডিট নেব


  • মোঃ ইমরুল ইউসুফ  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় |
  • প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৫, ১৮:৩২
রসিঘর
ছবি: আল মামুন খান এমিল

১৬ ডিসেম্বর ২০২৪। আমাদের বিজয় দিবস। পুরো ক্যাম্পাস বর্ণিল সাজে সেজেছে। শহীদ মিনারে জাতির সূর্যসন্তানদের স্মৃতিতে সম্মান জানিয়ে পুষ্প অর্পণ হয়েছে। হলে আজ বিশেষ খাবার। হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম আজ আমরা বন্ধুরা হাঁস রান্না করে খাব। আমরা মানে মাদারবক্স হলের বোরহান, পাভেল আর জুবায়ের। জোহা হলের কামরুল। বঙ্গবন্ধু হলের বুরহান উদ্দিন ও আবু বকর ভাই। শহীদ হবিবুর রহমান হলের শুভ্রদেব চাকমা। আরও আছে স্থানীয় বন্ধু তানিম, বিনোদপুরে মেসে থাকা বন্ধু মাহমুদ এবং মতিহার হল থেকে আমি। যেই কথা সেই কাজ। হাঁসের কথা শুনে কাজ ফেলে বাইক নিয়ে তানিম এসে আমাকে তুলে নেয়। চলে যাই মাদারবক্স হলের ২১৬ নম্বর রুমে। বোরহান ও জুবায়েরসহ বসে চটজলদি তৈরি হয়ে গেল একখানা বাজার-সদাই লিস্ট। সবাই মিলে টাকা দিলাম। দেরি নেই। তানিম, জুবায়ের ও আমি চলে গেলাম পবার খড়খড়ি হাটে। 

ব্যাপক দর কষাকষি করে সাড়ে আটশ টাকায় কেজি দুয়েক ওজনের হাঁস কেনা হয়। কাটাকুটি সেখানেই। চাল, ডাল, মসলা, সবজি ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কিনে ফিরলাম রুমে। ফিরে দেখি বোরহান এবং কামরুল মোবাইলে মহাব্যস্ত। ফেরার পথেই ওদের গরম পানি চাপাতে ফোন করেছিলাম। ওদের কি আর সে খেয়াল আছে! আমাদের মেজাজ দেখে ওরা পানি গরমে দেয়। এদিকে আমি, জুবায়ের, বোরহান এবং জুবায়েরের ভবিষ্যতের নিকটাত্মীয় মিলে পেঁয়াজ, মরিচ ও মসলা রেডি করতে লাগলাম। 

কামরুল কাজে নেই; বিছানায় বসে নানান ধরনের ফাজলামো করে চলেছে। সে আবার অনেক কথা ছন্দ মিলিয়ে কবিতার মতো করে বলে। জুবায়ের এই ফাঁকে মুড়ি-চানাচুর মাখার ব্যবস্থা করে ফেলে। অমৃত! 

অবশেষে কামরুলকে কাজে লাগানো গেল। সে আমার সাথে বসে অনেকক্ষণ হাঁস পরিষ্কার করল। এবার ক্যান্টিনের রান্নাঘর থেকে পশম নিশ্চিহ্ন করার জন্য হাঁসটা একটু পুড়িয়ে আনি। সবশেষে টুকরা করার কাজ। তাও হলো। ভাত ছাড়া সব রান্না আমার দায়িত্বে। বন্ধুমহলে আমার রান্নার সুখ্যাতি আছে। কিন্তু রাঁধব কেমন করে? শুভ্রদেব ছবি তুলে ফেসবুকে দেবে। মসলা পুড়ে যাচ্ছে তাতে তার কিছু এসে যায় না! আগে ফটো হবে। শুভ্রর দেখাদেখি বাকিরা চলে এলো। চলল ফটো তোলাতুলি পর্ব। এর মধ্যেই আমি রাঁধছি। শুভ্র, কথা স্পষ্ট, “রাঁধবি তুই! কিন্তু ফেসবুকে ফটো দিয়ে আমরা ক্রেডিট নেব।’ 

খানেওয়ালা বন্ধুরা সবাই হাজির। রান্নার সুবাসের প্রশংসা হচ্ছে চরম। সেই সাথে বেপরোয়া হাসি-ঠাট্টা আর ফটো। এক ব্যাচ সিনিয়র বুরহান উদ্দিন ভাই দক্ষিণ কোরিয়া যাবার সুযোগ পাবার সুখবর নিয়ে এলেন। শুভ্র ও তানিমকে নিয়ে তিনি গেলেন মিষ্টি কিনতে। এদিকে জুবায়ের সবার প্লেটে ভাত-তরকারি দিয়ে রেখেছে। খাওয়ার জন্য সবাই অস্থির। কামরুল ও মাহমুদ মিষ্টি আসার অপেক্ষা না করে খেতে শুরু করে। খাওয়া শুরুর আগে কামরুল আবার দুষ্টুমি করে সবার জন্য দোয়া শুরু করে। একে সুন্দরী বউ দাও; ওর গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঝামেলা মিটিয়ে দাও। বুরহান ভাইয়ের জন্য সুন্দরী কোরিয়া বউয়ের প্রার্থনাও থাকল এই দোয়াতে। কামরুলের কাণ্ডে হাসতে-হাসতে সবার পেটে খিল। 

শেষ পাতে মিষ্টি। মনে হয় রান্না পারিশ্রমিক স্বরূপ আমাকে দেয়া হলো চার পিস! খেয়ে নিলাম মনের আনন্দে। এন্তার হল্লা-হাসিতে খাওয়া-দাওয়া শেষ হবার পরও আধাঘণ্টার মতো আড্ডা চলে। অতঃপর কেউ একজনের মনে হলো পরদিন ইনকোর্স আছে। উঁহুহু! কী আর করা। আস্তে-আস্তে আড্ডা ভাঙল। যে যার রুমের দিকে রওনা হলাম। সময়টুকু আটক হলো মনের মণিকোঠায়। 



ক্যাটাগরি: রসিঘর

         

  রেটিং: ০

এই বিভাগের আরও পোস্ট

ক্যাম্পাস

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে যা পেয়েছি তা কোনোদিন ভুলব না

  • সজীব কুমার মন্ডল |
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: ক্যাম্পাস

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

কীভাবে একটি ছোট্ট গ্রাম ভারতের একটি ইউটিউব রাজধানী হয়ে উঠেছে?

  • খাদিজা আক্তার |
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

মানবিক রোবট : এক নতুন যুগের সূচনা

  • বর্ষা রানী দে|
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

হেলথকেয়ারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স : ভবিষ্যতের আশার আলো

  • অর্ণব মিত্র উৎসব|
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

ক্যাম্পাস

টইটই করে দিনরাত এক করে ঘুরে বেড়িয়েছি

  • জাওয়াহ বিনতে মিজান স্বর্ণা |
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: ক্যাম্পাস

সর্বশেষ

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে যা পেয়েছি তা কোনোদিন ভুলব না

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে যা পেয়েছি তা কোনোদিন ভুলব না

  • সজীব কুমার মন্ডল  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাটাগরি: ক্যাম্পাস

কীভাবে একটি ছোট্ট গ্রাম ভারতের একটি ইউটিউব রাজধানী হয়ে উঠেছে?
 মানবিক রোবট : এক নতুন যুগের সূচনা

মানবিক রোবট : এক নতুন যুগের সূচনা

  • বর্ষা রানী দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
হেলথকেয়ারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স : ভবিষ্যতের আশার আলো
 টইটই করে দিনরাত এক করে ঘুরে বেড়িয়েছি

টইটই করে দিনরাত এক করে ঘুরে বেড়িয়েছি

  • জাওয়াহ বিনতে মিজান স্বর্ণা  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাটাগরি: ক্যাম্পাস

সবচেয়ে পঠিত

মনে হচ্ছিল আমার কোনো অঙ্গহানি হয়ে গিয়েছে

মনে হচ্ছিল আমার কোনো অঙ্গহানি হয়ে গিয়েছে

  • সুরাইয়া সারমিন , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষন কথা বললাম

বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষন কথা বললাম

  • উসরাত জাহান নিতু , বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছিল

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছিল

  • ইমরান চৌধুরী , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

দিনটায় আমি নিজেকে সময় দিতে পেরেছি

দিনটায় আমি নিজেকে সময় দিতে পেরেছি

  • আশা আক্তার জুঁই , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

আজকের জরিপ 01

আপনি কোন সাহিত্যিকের কবিতা বা রচনা রোমান্টিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করেন?