সেই ছোটবেলা থেকে আমার কাছে ঢাবি মানেই ছিল বইয়ের পাতায় পড়া হাজারো ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী, আর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিসৌধ। শেষাবধি, আমি ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সুযোগ পাই। ২০১৯ সালের শেষে বিভাগে আসতেই প্রথমে চোখে পড়ে, লাল প্ল্যাকার্ডের ওপর সাদা রঙে লেখা,
“Department of Political Science
Oldest Largest Fastest Finest”
সেই মুহূর্তে এটা দেখে কিছুই মনে হয়নি। আসলে এত বছরের একটা স্বপ্নকে ভুলে এগিয়ে যেতে খুব মায়া লাগে, জানেন! আমি তো বুয়েট নিয়ে ভাবতাম।
তাসনিম ম্যাম যেদিন ফেমিনিজম পড়ান ক্লাসে, সেদিন আমার প্রথম মনে হয়েছিল, “নাহ, এই বিভাগে হয়তো পড়তে পারব”—এভাবেই বিভাগের প্রতি ভালো লাগার শুরু।
মহামারির প্রকোপে সেই ভালো লাগাটা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেনি। জীবনের সব রঙ যখন মিলিয়ে যাবে যাবে করছে, তখনই অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়, আমরা নতুন করে ক্যাম্পাস জীবন উপভোগ করি, যা সবার চেয়ে আলাদা, সবচেয়ে নতুন। শুরুটা হয়, অনেক পড়াশোনার চাপ আর নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা নিয়ে।
প্রায় দেড় বছর পর, সেই ঢাবির ক্যাম্পাস জীবনে ফিরে আসি। শুরুটা টিভির পর্দায় দেখানো স্বপ্নের মতো না হলেও বাস্তবতার ছায়া মনে দাগ কাটে। ক্লাসের পর ক্লাস, এরই ফাঁকে ফাঁকে হাকিম চত্বরে আড্ডা দেওয়া, কিছুদূর হেঁটে চারুকলার শান্ত পরিবেশে বসে থাকা কিংবা শ্যাডো থেকে ফটোকপি শিট নেওয়ার প্রতিযোগিতা—কোনোটাই বাদ দেওয়া যায় না স্মৃতির খাতা থেকে।
আমার সবচেয়ে পছন্দের দুটি গল্প আছে ক্যাম্পাস জীবন নিয়ে।
প্রথমটা হচ্ছে, ১৪ ব্যাচের প্রথম আর একমাত্র ট্যুর। আর পরের গল্পটা হচ্ছে হুট করে পথ না চিনে যখন তখন শহরের পথে বেরিয়ে পড়া।
ট্যুরটা ছিল সেন্টমার্টিনে, সবাই মিলে না ঘুমিয়ে সারারাত নেচে-গেয়ে বাসের সবচেয়ে পিছনের সিটে বসে টেকনাফে পৌঁছাই। ‘সমুদ্রবিলাস’ উপন্যাসের সব ছবি চোখের সামনে ভাসছিল। সাথে ছিল মাথার ভেতর বাজতে থাকা, দারুচিনি দ্বীপের গান। এই গানে ভিডিও এডিট করে পোস্ট করার মতো ট্রেন্ডে আমরাও গা ভাসালাম। প্রথম দিন গিয়েই দেখতে পাই, ‘বায়োলুমিনিসেন্ট’, বা, আলোজ্বলা শৈবাল। সেন্টমার্টিনে সচরাচর এর দেখা না পাওয়া গেলেও, বাস জার্নির কষ্ট দেখেই হয়তো প্রকৃতির গিফট। এরপরের দুদিন রাত জেগে সমুদ্রের ঢেউয়ের গান শুনে, দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থেকে আর আড্ডা দিয়েই কেটে যায়। কত যে স্মৃতি জমে আছে সেন্টমার্টিনের ঢেউয়ে। সমুদ্রের কাছে যা কিছু মন খারাপের সব কিছু জমা দিয়ে একরাশ আনন্দ নিয়ে ফিরে আসি।
ক্যাম্পাসে এসে অনেক ভালো বন্ধু জুটেছে, তাদের সাথে টইটই করে দিনরাত এক করে ঘুরে বেড়িয়েছি, টিএসসিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিয়েছি, ফ্যাকাল্টির সিঁড়িতে এমনি এমনি বসে থেকেছি কত।
কখনো কেউ না থাকলে হাতে ম্যাপ নিয়ে নিজেই বেরিয়ে পড়তাম শহর ঘুরতে, পথ হারাতাম, আবার এগিয়ে যেতাম। উবার বাইক এরকম ঘুরতে যাওয়ার জন্য আদর্শ মাধ্যম, অজানাকে ভরসা করে বেরিয়ে পড়ার কী যে আনন্দ, তা বর্ণনা করা যায় না।
আমাদের ১৪তম ব্যাচ একইসাথে ফেমাস এবং ইনফেমাসও বটে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আজ আমরা গ্রাজুয়েটস, জীবনের সবচেয়ে প্রব্লেম ফ্রি সময়টার সমাপ্তি হয়েছে।
মাঝেমাঝে মনে হয়, এত এত স্মৃতি কি কখনো ম্লান হয়ে যাবে? মুছে যাবে হৃদয় থেকে? কক্ষনো না, বরং সময়ের সাথে সাথে আরো সমৃদ্ধ হবে, সেই ছোট ছোট ঘটনা, সকাল আটটার ক্লাস, সেই ক্লাসের জন্য সকাল ৬টায় বেরিয়ে পড়া, ক্লাসে পৌঁছে ক্লাস ক্যান্সেল হওয়া, এমনকি মনে থাকবে ফ্যাকাল্টির লিফটে ওঠা-নামাটাও!
এই জীবনের কতকিছুর সাক্ষী ঢাবি! এক জীবনের সব রঙ মিলিয়ে আঁকা অগণিত স্মৃতির গল্প আছে এখানে। খুব বেশি ইমোশনাল না আমি, কিন্তু টিএসসির চায়ের আড্ডার দিনগুলো শেষ ভেবে মান্না দে’কে মনে পড়েই যাচ্ছে :
“কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই
কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই, আজ আর নেই।”
রাঁধবি তুই! কিন্তু ফেসবুকে ফটো দিয়ে আমরা ক্রেডিট নেব
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে যা পেয়েছি তা কোনোদিন ভুলব না
কীভাবে একটি ছোট্ট গ্রাম ভারতের একটি ইউটিউব রাজধানী হয়ে উঠেছে?
মানবিক রোবট : এক নতুন যুগের সূচনা
হেলথকেয়ারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স : ভবিষ্যতের আশার আলো
জীবন থেমে থাকে না, বরং অন্যভাবে গল্প শুরু হয়
মনে হচ্ছিল আমার কোনো অঙ্গহানি হয়ে গিয়েছে
বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষন কথা বললাম
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছিল
দিনটায় আমি নিজেকে সময় দিতে পেরেছি
আপনি কোন সাহিত্যিকের কবিতা বা রচনা রোমান্টিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করেন?