বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে যা পেয়েছি তা কোনোদিন ভুলব না


  • সজীব কুমার মন্ডল   ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
  • প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৫, ১৭:৪৯
ক্যাম্পাস
ফোটো: এআই দিয়ে তৈরি

ছোট থেকেই নতুন কিছুর প্রতি আমার বিশেষ আগ্রহ ছিল। হোক সেটা ভালো বা খারাপ। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সেই নতুন বিষয়ের ক্ষেত্রটি অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছিল যা থেকেই জন্ম নিয়েছিল কতগুলো সুখকর স্মৃতি। এই রচনায় আমি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কিছু সুখকর স্মৃতি তুলে ধরব।

‘বন্ধু সংঘ’

নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধু এবং নতুন চ্যালেঞ্জ আমি শুরু থেকেই এই বিষয়গুলোকে খুব স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিলাম। কিছু দিনের মধ্যেই আমি ও আমার হলের কিছু বন্ধু মিলে একটি ‘বন্ধু সংঘ’ তৈরি করেছিলাম। এই সংঘের মধ্য দিয়ে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। 

প্রথম থেকেই আমরা তো একসঙ্গে ক্লাসে যেতাম, তাছাড়াও আমাদের একটি বিশেষ রুটিন ছিল—তা হচ্ছে প্রতি শুক্রবার এবং শনিবার আমরা ঢাকার কিছু ঐতিহাসিক এবং দর্শনীয় স্থানের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়তাম। চেষ্টা করতাম সেই জায়গার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার। জানা ও দেখার পাশাপাশি নানা ধরনের আড্ডা, দুষ্টুমি এবং খুনসুটিও ছিল আমাদের নিত্য সঙ্গী। দর্শনীয় গন্তব্যে যাওয়া, সে এলাকার খাবারের স্বাদ নেওয়া থেকে রাস্তাঘাটের বিচিত্র অবস্থা নিয়ে কতশত স্মৃতি ঘুরপাক খাচ্ছে তা লিখে শেষ করার না।

‘উত্তরবঙ্গ ও খেজুরের রস’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক কাজের অংশগ্রহণে অনেক সুখকর স্মৃতি তৈরি হয়েছে। একবার এক রাতে, আমরা শীতবস্ত্র বিতরণ করতে গিয়েছিলাম নীলফামারীর জলঢাকার কিছু এলাকায়। সেখানে গিয়ে আমরা শীতবস্ত্র বিতরণ শেষে উত্তরবঙ্গ এলাকা ঘুরেছিলাম। সেবার কয়েকজন বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিলাম। সকাল সকাল উঠে খেজুরের রস দিয়ে মুড়ি খেয়েছিলাম বন্ধুরা সবাই মিলে। সে এক অসাধারণ স্মৃতি। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও আনন্দের মুহূর্ত তৈরি করেছিলাম। 

‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ সাংস্কৃতিক উৎসব’ 

আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আরেকটি সুখকর অভিজ্ঞতা হলো রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন এবং অংশগ্রহণ। আমাদের ব্যাচ থেকে কয়েকবার এবং বিভাগ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে একবার এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আমরা সবাই মিলে সাজগোজ করে, গান গেয়ে, নাচ করে পুরো সময় আনন্দ উদযাপন করেছিলাম। 

পুরো বিভাগ প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল। সেই উৎসবের দিনগুলোর আনন্দ কখনো ভুলবার না। সেই উৎসবের কিছু প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে প্রিয় শিক্ষকদের কাছে থেকে পুরস্কার এবং সম্মান পেয়েছি যা আমার জীবনের একটি সুখকর স্মৃতি হিসেবে বিবেচিত। 

‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রেম’

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কিন্তু এক অদ্ভুত প্রেমের গল্প লিখতে পারে। আমি তখনও জানতাম না যে কেউ আমাকে আমার আড়ালে খেয়াল করছে। সময় গড়িয়ে যায়, এবং আমরা একসাথে ক্যাম্পাসের নানা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে শুরু করি। সে আমাকে বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্য করত এবং পড়ার প্রতি আমার আগ্রহ জাগিয়ে তুলত। কিন্তু কেউ কাউকে নিজেদের মনের কথা বলতে পারছিলাম না। হঠাৎ একদিন কোনো বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুজনে দুজনার মনের কথা বলে ফেললাম। সেই মুহূর্তে বুঝতে পারলাম তার প্রতি আমার আকর্ষণ নিতান্ত বন্ধুত্বের আকর্ষণ নয়। আমাদের মধ্যে আসলে পরস্পরের প্রতি প্রেমের জন্ম নিয়েছে। এই অনুভূতি আমাদের ক্যাম্পাস জীবনে এক নতুন উজ্জ্বলতা এনে দেয়। 

‘কাশ্মীর ভ্রমণ’ 

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়ার স্মৃতিগুলো অনেক স্মরণীয় মুহূর্ত এনে দিয়েছে। আর সেটা যদি হয় পৃথিবীর স্বর্গ খ্যাত কাশ্মীর তাহলে বিষয়টা অন্য পর্যায়ের। আমরা কয়েকজন মিলে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে গিয়েছিলাম ১৬ দিনের সফরে। অনেক ধরনের স্মৃতি আজও নাড়া দেয় অবিরাম সেই দিনগুলোর কথা মনে করলে। কাশ্মীরের অনেক স্মৃতি রয়েছে সেগুলো সব লেখা সম্ভব না, কিন্তু কিছু বিষয় শেয়ার না করে থাকতে পারলাম না, সেখানে গিয়ে আমরা বরফ নিয়ে অনেক মজা করেছিলাম এবং বিভিন্ন স্ট্যাচু বানিয়েছিলাম। 

সেখানকার সংস্কৃতি-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছিলাম সেখানে মানুষ কী ধরনের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে সেগুলো দেখার চেষ্টা করেছিলাম। একদিন সেখানে আমরা সবাই মিলে রান্নার আয়োজন করেছিলাম। এক বন্ধু রান্না করতে গিয়ে একটু বেশি মসলা মিশিয়ে ফেলেছিল। ফলে খাবারটা অতিরিক্ত ঝাল হয়ে গেল। সবাই একে অপরকে খাওয়ার চ্যালেঞ্জ দিচ্ছিলাম। আরো কতশত কথা যা বলে শেষ হওয়ার না। সেই স্মৃতিগুলো আজও মনে পড়ে, এই মুহূর্তগুলোই আসলে জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা।

‘লুক অ্যাট হিম’ 

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্কের অনেক সুখকর স্মৃতি রয়েছে। একবার আমাদের ক্লাস টেস্ট পরীক্ষা চলছিল। সেখানে স্যার হোয়াইট বোর্ডে প্রশ্ন লিখে দিয়েছিলেন। প্রশ্ন ছিল একটি। সেটারই উত্তর করতে হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় কেউ প্রশ্নটির উত্তর লিখতে পারছিল না। সময় অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কেউ উত্তর করছে না, করতে পারছে না।  এখন আমার বিষয়টা বলি। আমি সেদিন একটু দেরিতে পরীক্ষা রুমে আসি এবং চুপটি করে পিছনে বসি। তারপর উত্তরপত্র নিয়ে আস্তে আস্তে নাম, রোল, পরীক্ষার নাম সব লিখতে শুরু করেছি মাত্র, এই সময় স্যার সামনে থেকে আমার দিকে আঙুল তুলে সবাইকে বলেন, “লুক অ্যাট হিম।” তাকে দেখো সবাই। কীভাবে সে লিখছে? তোমরা কেন উত্তর করতে পারছ না? 

স্যার অনেক গর্ব করে আমার কাছে এসে দেখে আমার অবস্থা আরো খারাপ। লেখা শুরুই করতে পারিনি আমি। সেই সময় আমি না হাসতে পারছি, না কিছু করতে। এরকম আরো কিছু মুহূর্ত আছে যা মাঝে মাঝেই মনে হলে হাসি পায় এবং সাথে সাথে স্মৃতিকাতরও করে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হলো বলে। 

এই কয় বছরে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে যা পেয়েছি তা কোনোদিন ভুলব না। আমি জানি। জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় সময়গুলো কেটেছে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। 



ক্যাটাগরি: ক্যাম্পাস

         

  রেটিং: ০

এই বিভাগের আরও পোস্ট

ক্যাম্পাস

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে যা পেয়েছি তা কোনোদিন ভুলব না

  • সজীব কুমার মন্ডল |
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: ক্যাম্পাস

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

কীভাবে একটি ছোট্ট গ্রাম ভারতের একটি ইউটিউব রাজধানী হয়ে উঠেছে?

  • খাদিজা আক্তার |
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

মানবিক রোবট : এক নতুন যুগের সূচনা

  • বর্ষা রানী দে|
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

হেলথকেয়ারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স : ভবিষ্যতের আশার আলো

  • অর্ণব মিত্র উৎসব|
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

ক্যাম্পাস

টইটই করে দিনরাত এক করে ঘুরে বেড়িয়েছি

  • জাওয়াহ বিনতে মিজান স্বর্ণা |
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: ক্যাম্পাস

সর্বশেষ

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে যা পেয়েছি তা কোনোদিন ভুলব না

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে যা পেয়েছি তা কোনোদিন ভুলব না

  • সজীব কুমার মন্ডল  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাটাগরি: ক্যাম্পাস

কীভাবে একটি ছোট্ট গ্রাম ভারতের একটি ইউটিউব রাজধানী হয়ে উঠেছে?
 মানবিক রোবট : এক নতুন যুগের সূচনা

মানবিক রোবট : এক নতুন যুগের সূচনা

  • বর্ষা রানী দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
হেলথকেয়ারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স : ভবিষ্যতের আশার আলো
 টইটই করে দিনরাত এক করে ঘুরে বেড়িয়েছি

টইটই করে দিনরাত এক করে ঘুরে বেড়িয়েছি

  • জাওয়াহ বিনতে মিজান স্বর্ণা  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাটাগরি: ক্যাম্পাস

সবচেয়ে পঠিত

মনে হচ্ছিল আমার কোনো অঙ্গহানি হয়ে গিয়েছে

মনে হচ্ছিল আমার কোনো অঙ্গহানি হয়ে গিয়েছে

  • সুরাইয়া সারমিন , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষন কথা বললাম

বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষন কথা বললাম

  • উসরাত জাহান নিতু , বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছিল

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছিল

  • ইমরান চৌধুরী , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

দিনটায় আমি নিজেকে সময় দিতে পেরেছি

দিনটায় আমি নিজেকে সময় দিতে পেরেছি

  • আশা আক্তার জুঁই , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

আজকের জরিপ 01

আপনি কোন সাহিত্যিকের কবিতা বা রচনা রোমান্টিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করেন?