জীবনজয়ীর নাই নেট বিভাগের আহবানে আমি জানুয়ারির ছয় তারিখ সকাল ছয়টা থেকে পরবর্তী চব্বিশ ঘন্টা ইন্টারনেট ছাড়া কাটিয়েছি। প্রথমে মনে হয়েছিল আমি কি পারবো? দোদুল্যমানতার মধ্যেও সিদ্ধান্তে অটল থাকলাম।
সকাল ৬টায় শুরু করার পর প্রথম যে অনুভূতিটি হলো, তা হচ্ছে অস্থিরতা। ফোনটা যখন-তখন হাতে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া চেক করার অভ্যাসটা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কিন্তু এখন কোনোকিছুই খোলার সুযোগ নেই। প্রথমে নিজের অজান্তেই বারবার ফোনে হাত চলে যাচ্ছিল। কোন নোটিফিকেশন এসেছে কিনা? কোন মেসেজ এসেছে কি না? কিছু মিস করছি কিনা? অস্বস্তি হচ্ছিলো। এই অস্বস্তি শরীর ও মন উভয়ে ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বুঝলাম এই অনুভুতিটা আসলে একটা আসক্তি। এর মধ্যেই সকালের অন্যান্য কাজগুলো করার চেষ্টা করছিলাম। থেকে থেকে ইন্টারনেটের অভাব বোধ করছিলাম।
একটু সময় নিয়ে ঘরের কাজ করলাম। নিজের কাজগুলো গুছিয়ে নিলাম। সকাল ৮টার দিকে আমি এক কাপ চা তৈরি করলাম। টিভিতে কিছু না দেখে, আমি পড়ার জন্য একটি বই হাতে তুলে নিলাম। বইয়ের প্রতিটি পাতায় যেন নতুন কিছু শিখতে লাগলাম। অনেকক্ষন সময় বইয়ে কাটলো। বইয়ের মধ্যে যেন আমি নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলাম। লেখক বা সাহিত্যিকদের যে চিন্তা, যেটি তারা কাগজে লেখেন, সেটা একটু গভীরভাবে পড়লে অন্যরকম এক অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এটা ইন্টারনেটে পড়ে পাইনা।
দুপুরের দিকে ইন্টারনেট ছাড়া সময়টা একটু একাকী মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, আমি একাকী, আর সবাই যেন এক একটি ভার্চুয়াল জগতে চলে গেছে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারলাম, এই একাকীত্বটি আসলে আরামপ্রদ। সবার চোখে চোখ রেখে কথা বলা, প্রকৃতির মধ্যে নিঃশব্দে হারিয়ে যাওয়া, এসবের মূল্য হয়তো ইন্টারনেট কখনো দিতে পারবে না। দিনের এই সময়টিতে নিজের মনে গভীরে ঢুকতে চাইলাম। অতীতের অনেকগুলো মুহূর্তে ডুবে গেলাম । কয়েকবার মনে হোলো ইন্টারনেট ছাড়া জীবন অনেক সহজ হতে পারে, যদি আমরা নিজের অভ্যন্তরীণ চাহিদাগুলোকে বুঝতে পারি।
বিকেলের দিকে আমার মধ্যে এক ধরনের মুক্তির অনুভূতি শুরু হয়। প্রথমদিকে ইন্টারনেট ছাড়া থাকাকে একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছিল, এখন সেটা বেশ স্বস্তিদায়ক মনে হচ্ছে। ইন্টারনেট ছাড়া কাটানো সময় একধরনের আধ্যাত্মিক প্রশান্তি দিচ্ছিলো আমাকে। আমি কিছু সৃজনশীল কাজে মনোযোগ দিলাম। একটু ছবি আঁকলাম একটু গান গাইলাম। এভাবে সময় পার হচ্ছিলো।
সন্ধ্যায় যখন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম, তখন অনুভব করলাম, আমাদের সম্পর্কের গভীরতা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কখনো তৈরি হয় না। আমরা যখন প্রযুক্তির মধ্যে ডুবে থাকি, তখন আমাদের পারিবারিক বা সামাজিক সম্পর্কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। কিন্তু আজ, পুরোপুরি ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যখন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছিলাম, তখন মনে হলো- এটাই তো আসল যোগাযোগ, নিজেদের মধ্যে কথা বলা, হাসি-ঠাট্টা করা- এগুলোতেই আমাদের জীবনকে সুন্দর করে তোলে। রাত যত গভীর হতে থাকে, ততই আমি অনুভব করি যে, এই ইন্টারনেট ছাড়া সময়টা আমাকে এক ধরনের শিথিলতা এনে দিয়েছে। যখন আমার শরীর এবং মন সম্পূর্ণরূপে বিশ্রামে ছিল, তখন বুঝতে পারলাম-আজকের দিনটা আসলে একটা বিরতি, একটি মুক্তি। সারাদিন ফোনে স্ক্রলিং, সামাজিক যোগাযোগে হারিয়ে যাওয়া থেকে একটু বেরিয়ে এসে, নিজেকে অনুভব করার সুযোগ পাওয়া - এটা অনেক বড় পাওয়া। এটা এমন একটি মুহূর্ত ছিল যখন আমি নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলাম। ইন্টারনেটের বাইরে থাকার এই একদিন সত্যিই একটা বিশ্রাম ছিল, যেটা আমি অনেকদিন ধরে অনুভব করতে পারিনি।
পরদিন সকালে আবার হাতে ফোন নিয়েছি। কিন্তু সেদিন এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ইন্টারনেটকে দেখতে শুরু করেছি।
রাঁধবি তুই! কিন্তু ফেসবুকে ফটো দিয়ে আমরা ক্রেডিট নেব
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে যা পেয়েছি তা কোনোদিন ভুলব না
কীভাবে একটি ছোট্ট গ্রাম ভারতের একটি ইউটিউব রাজধানী হয়ে উঠেছে?
মানবিক রোবট : এক নতুন যুগের সূচনা
হেলথকেয়ারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স : ভবিষ্যতের আশার আলো
জীবন থেমে থাকে না, বরং অন্যভাবে গল্প শুরু হয়
মনে হচ্ছিল আমার কোনো অঙ্গহানি হয়ে গিয়েছে
বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষন কথা বললাম
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছিল
দিনটায় আমি নিজেকে সময় দিতে পেরেছি
আপনি কোন সাহিত্যিকের কবিতা বা রচনা রোমান্টিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করেন?