আলুঘাঁটির গল্প


  • সজীব কুমার মন্ডল   ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
  • প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৫, ২০:৩৪
রসিঘর
ফোটোঃ লেখক

সেদিন ৭ই মার্চ। শুক্রবার। তাই সাপ্তাহিক ছুটির দিন। সকালে ভিজিয়ে রাখা কাপড় ধুয়ে এসে আমি ক্যান্টিনে খেতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এমন সময় রুমমেট রিমন এসে জানায় ক্যান্টিনে আজও একই সব খাবার। ব্রয়লার মুরগি নয়তো পাঙাশ মাছ সাথে পাতলা ডাল; একটু আলু ভর্তা। শুনে আর খেতে মন চাইল না। রিমন তখন একাই খেতে যেতে চাইল। আমি খুব বিরক্ত হয়ে বললাম, “প্রতিদিন এক খাবার খেতে খারাপ লাগে না?”আলাপে ঢুকে আরেক রুমমেট সুফল বলে ওঠে, “তাহলে চলেন আজকে রান্না করা যাক।” প্রস্তাবটা মনে ধরল বেশ। মেন্যু নিয়ে কথা বলার মধ্যেই পল্লব হাজির। সেও রাজি। অনেক আলাপের পরে খিচুড়ি, আলু ভাজি এবং ইলিশ ভাজি সাব্যস্ত হলো। 

পল্লব আর রিমনকে পলাশী বাজারে পাঠিয়ে দিলাম। আমরা বাকি কাজ গুছাতে শুরু করলাম। রুমের আগের বাসিন্দাদের রেখে যাওয়া রাইস কুকার লকার থেকে বের করলাম। সবকিছু পরিষ্কার করে নিতে নিতে বাজার হাজির।

রাইস কুকারে খিচুড়ি চড়ল বিনা-বিলম্বে। পেঁয়াজ, রসুন কুচি, সাথে গাজর, পেঁপে, শিম, বরবটি, আর ফুলকপি। সাথে আলু। সব হালকা করে ভেজে নিলাম। এবার চাল-ডাল নেড়েচেড়ে সবকিছু মিলিয়ে রাইসকুকারের ঢাকনা লাগালাম। খিচুড়ি বিনা ঝামেলায় রেডি হয়ে গেল। 

রিমন বলে, “রান্নাটা মনে হয় খুব ভালো হয়েছে।” 

আমি বলি, “বুঝলে কেমন করে?” 

“অনেক সুন্দর ঘ্রাণ বের হয়েছে। গন্ধে আমার অর্ধেক খাওয়া শেষ।”

“খুব ভালো। তাহলে খাবার সময় তুমি অন্যদের চেয়ে অর্ধেক পাবে!” 

খিচুড়ি হয়ে গেল। এবার শুরু ঝামেলা। সুফল ও পল্লবের কেউই রান্নায় তাদের শ্রেষ্ঠত্বের দাবি ছাড়তে রাজি নয়। বাধ্য হয়ে টস করা হলো। সুফল পেল আলুভাজির দায়িত্ব। পল্লব ইলিশ ভাজবে। এবার আসল খবর! সুফল জানাল সে আগে কখনো রান্না করেনি। কাণ্ড! কিন্তু সে তো ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। পড়ল ইউটিউব নিয়ে; আলুভাজা শিখতে। এদিকে পল্লব ইলিশ ভেজে ফেলল ঠিকঠাক। সে রান্নার ব্যাপারে কনফিডেন্ট। 

সুফলের ইউটিউব কোর্স সম্পন্ন হয়েছে। সে আলু ভাজবে এখন। আমরা সবাই তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলাম! তবে তার বিপুল তৎপরতার চোটে আমরা পাশ থেকে সরে আসলাম। গেলাম মিষ্টি কিনতে। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে দেখি সুফল চুপচাপ বসে আছে। ভাবলাম রান্না শেষ তাই বসে আছে। আসলে ঘটনা ভিন্ন। 

সুফল বলে, “আলু ভাজি হলো না। ওটা আলুর ঘাটি হয়ে গেছে।” 

“সে আবার কী?” 

“মানে আলু সিদ্ধ হচ্ছিল না দেখে আমি জল দিয়েছি। কিন্তু জলের পরিমাণ হয়ে গেছে খুব বেশি। এখন আর এই আলু ভাজি হবে না। আলুর ঘাটি খেতে হবে।”   

কুকার খুলে দেখি কথা সত্য। বেচারার আলুভাজি আলুঘাটিতে পরিণত হয়েছে।  কুছ পরোয়া নেই। আলু ভাজি করেই খেতে হবে কে বলেছে?  কিছুক্ষণ ব্যাপারটা নিয়ে হাসাহাসি করে খেতে বসলাম। অবাক কাণ্ড! সুফলের  ঘাটি দারুণ হিট। দারুণ স্বাদ হয়েছে। আমরা কুকারের সব ভাত শেষ করলাম ঘাটিতে মেখে। ভাগ্য ভালো সুফল জলটা বেশি ঢেলেছিল আলুতে।



ক্যাটাগরি: রসিঘর

         

  রেটিং: ০

এই বিভাগের আরও পোস্ট

রসিঘর

রাঁধবি তুই! কিন্তু ফেসবুকে ফটো দিয়ে আমরা ক্রেডিট নেব

  • মোঃ ইমরুল ইউসুফ|
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: রসিঘর

ক্যাম্পাস

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে যা পেয়েছি তা কোনোদিন ভুলব না

  • সজীব কুমার মন্ডল |
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: ক্যাম্পাস

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

কীভাবে একটি ছোট্ট গ্রাম ভারতের একটি ইউটিউব রাজধানী হয়ে উঠেছে?

  • খাদিজা আক্তার |
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

মানবিক রোবট : এক নতুন যুগের সূচনা

  • বর্ষা রানী দে|
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

হেলথকেয়ারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স : ভবিষ্যতের আশার আলো

  • অর্ণব মিত্র উৎসব|
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

সর্বশেষ

সবচেয়ে পঠিত

মনে হচ্ছিল আমার কোনো অঙ্গহানি হয়ে গিয়েছে

মনে হচ্ছিল আমার কোনো অঙ্গহানি হয়ে গিয়েছে

  • সুরাইয়া সারমিন , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষন কথা বললাম

বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষন কথা বললাম

  • উসরাত জাহান নিতু , বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছিল

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছিল

  • ইমরান চৌধুরী , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

দিনটায় আমি নিজেকে সময় দিতে পেরেছি

দিনটায় আমি নিজেকে সময় দিতে পেরেছি

  • আশা আক্তার জুঁই , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

আজকের জরিপ 01

আপনি কোন সাহিত্যিকের কবিতা বা রচনা রোমান্টিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করেন?