ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি


  • ড. মঞ্জুরে খোদা (টরিক)  ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়, টরন্টো, কানাডা |
  • প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৫, ২৩:১৫
ক্যাম্পাস
ফোটোঃ বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইট

২০১৪ সালে জাপান থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করে অভিবাসী হিসেবে কানাডায় আসি। এখানে আসার পর কোনো  বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্ত হওয়া যায় কিনা সেই প্রচেষ্টা থেকে ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করি। বেশ কিছুদিন চেষ্টা করার পর আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন প্রক্টর, ইনভিজিলেটর, টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট, রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট ও স্কুলে চাকরি করি। খণ্ডকালীন চাকরির পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্থায়ী চাকরির চেষ্টাও করতে থাকি।


তারপর কোনো একসময় আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লাইব্রেরিতে রাতের ’লিড পজিশন’-এ আবেদন করি। আমার সাথে আরো অনেকেই আবেদনকারী ছিলেন। সৌভাগ্যক্রমে যথাযথ ভাইবা-ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে পজিশনটি পেয়ে যাই। আমি খুব ভালো ছাত্র ছিলাম না। তবে লেখাপড়ার প্রতি আমার আগ্রহ ছিল। আর লেখালেখির অভ্যাস আমার আগে থেকেই। কে না জানে যে লেখালেখি ও লেখাপড়ার জন্য লাইব্রেরি হচ্ছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও প্রয়োজনীয় স্থান। আমার পেশা ও শখের একটি চমৎকার সমন্বয় তৈরি হয় এই পেশায়। আমি আমার সময়টিকে প্রকৃতই আনন্দের সাথে ব্যবহার করতে পারছি।       

ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় কানাডার তৃতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি। একে কানাডার বৃহত্তম গ্রিনারি ক্যাম্পাস বলা হয়। বিশ্ব একাডেমিক র‍্যাঙ্কিংয়ে এর অবস্থান ৩৩। শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫৬ হাজার। এর ভিতর অনেকগুলো কমিউনিটি ও পেশাভিত্তিক কলেজ আছে। 

বাংলাদেশের কোনো পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে রাতদিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে এমনটা আমার জানা নেই। কানাডার প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লাইব্রেরি ফাইনাল পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের জন্য রাতদিন ২৪ ঘণ্টার জন্য খুলে রাখা হয়। কানাডার শিক্ষাবর্ষ অনুযায়ী এখানে বছরে দুইবার এপ্রিল ও ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়। সেই সময় মার্চ-এপ্রিল ও নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস লাইব্রেরি খোলা থাকে। 


কেন খুলে রাখা হয়?

খোলা থাকার কারণ শিক্ষার্থীরা যাতে পরীক্ষার আগে রাতভর লাইব্রেরি ব্যবহার করে লেখাপড়া করতে পারে। অনেক সময় ছাত্রদের নিজেদের বাসায়, নিরিবিলি পড়ার পরিবেশ থাকে না। তখন লাইব্রেরিতে এসে অখণ্ড সময় নিয়ে তারা পড়তে পারে। লাইব্রেরিতে ছাত্ররা এককভাবে, গ্রুপ নিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রাতভর লেখাপড়া করতে পারে। শুধু তাই নয় অনেক শিক্ষার্থীকে দেখেছি তাদের বাসা-বাড়ি হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক দূরে, তারা আগের রাতে লাইব্রেরিতে এসে সারারাত লেখাপড়া করে সকালে পরীক্ষার হলে চলে যায়। ভাবছেন এভাবে সারারাত পড়ে সরাসরি পরীক্ষা হলে কি ঝুমুনি আসবে না? লেখাপড়ার ফাঁকে তাদের অনেককে এখানে কিছু সময় ঘুমিয়ে নিতে দেখি। 

লাইব্রেরিতে ছোট ছোট রুম আছে যেখানে শিক্ষার্থীরা একাকী বা গ্রুপ নিয়ে লেখাপড়া করতে পারে। বিশাল কোয়াইট স্টাডি স্পেস আছে যেখানে সারি সারি চেয়ার টেবিল সাজানো আছে। সেখানেও একা বা গ্রুপে পড়া যায়। প্রত্যেক টেবিলে আলাদা ল্যাম্পের ব্যবস্থা আছে। 

বিশাল কম্পিউটার ল্যাব আছে, যেখানে বড় বড় কার্ব কম্পিউটার রাখা আছে। কম্পিউটার ব্যবহার করেও তারা সারারাত পড়তে ও গবেষণা করতে পারে। এছাড়া আছে একটি অত্যাধুনিক কপি সেন্টার। সারারাত খোলা থাকে। এখানে নামমাত্র মূল্যে শিক্ষার্থীরা যে কোনো ডকুমেন্ট প্রিন্ট, ফটোকপি ও স্ক্যান করতে পারে। 

লাইব্রেরিতে আগে থেকে অনুরোধ জানানো বই-নোট-জার্নাল, ভিডিও-ডকুমেন্ট রাতের যে কোনো সময় তারা তুলে পড়তে পারে। আর লেখাপড়া করতে করতে যদি একঘেয়েমি চলে আসে, মাথা আর কাজ না করে তা কাটানোর ব্যবস্থা আছে। ফ্রন্ট ডেস্কে পাজল বোর্ড, ড্রইং পেপার-পেনসিল, অরিগামির জন্য পেপার-কাঁচি, সাপ-মই খেলার লুডু রাখা আছে। মাথা ব্লক হয়ে গেলে অনেকে এগুলোতে কিছু সময় কাটায়। 

শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই নয়, বাইরের যে কোনো ব্যক্তিও লাইব্রেরির এই সুবিধা দিন-রাতের যে কোনো সময় ব্যবহার করতে পারে। একে বলে কমিউনিটি সার্ভিস। ‘জ্ঞান সবার জন্য উন্মুক্ত’, ভাবনা এরকম। ভাবছেন সারারাত এভাবে লাইব্রেরি খোলা থাকে, যদি কোনো অঘটন ঘটে? না বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী আছে বিধায় সেটা ঘটার সুযোগ নেই। শুধু তাই নয়, ছাত্রীরা যদি মনে করে তাদের রুমে বা বাসায় যেতে নিরাপত্তা কর্মী দরকার, ফোন করার সাথে সাথেই তারা এসে হাজির হবে এবং তাকে নিরাপদে পৌঁছে দেবে।  

আমাদের লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও সুযোগ সুবিধার কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা সেটা মনিটর করার জন্য সার্বক্ষণিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি আছেন। আছে লারনিং বুথ, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের টেক্সট, স্টাডি ম্যটেরিয়াল, রিসার্চ পেপার সংশোধন করাতে পারে। 

ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে সায়েন্স-ইঞ্জিনিয়ারিং-বিজনেসসহ সাতটি প্রধান লাইব্রেরি আছে। তাছাড়া প্রত্যেক বিভাগে আছে নিজস্ব লাইব্রেরি। ইয়র্কের সবচেয়ে বড় স্কট লাইব্রেরিতেই শুধু বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ।


বাংলাদেশে কি এমন ব্যবস্থা চালু হবে?

ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান কানাডার অন্টারিও প্রদেশের টরন্টো শহরে। এখানে শুধু কানাডার ছেলেমেয়েরাই লেখাপড়া করে না, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীরাও আসে। কানাডার বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীদেরকে বলা হয় ’ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট’। বিশ্ববিদ্যালয়টি বহুজাতি ও বহুভাষার এক সহাবস্থানস্থল। এখানে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অনেকে পড়তে আসে। 

‘ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’ নামের একটি সংগঠন আছে। কানাডা ও বাংলাদেশের কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট কাজকর্ম করে থাকে এই সংগঠন। বাংলাদেশ থেকে যারা ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য বিদেশ যেতে আগ্রহী তাদের জন্য ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে একটি পছন্দের স্থান।


ক্যাটাগরি: ক্যাম্পাস

         

  রেটিং: ০

এই বিভাগের আরও পোস্ট

রসিঘর

রাঁধবি তুই! কিন্তু ফেসবুকে ফটো দিয়ে আমরা ক্রেডিট নেব

  • মোঃ ইমরুল ইউসুফ|
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: রসিঘর

ক্যাম্পাস

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে যা পেয়েছি তা কোনোদিন ভুলব না

  • সজীব কুমার মন্ডল |
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: ক্যাম্পাস

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

কীভাবে একটি ছোট্ট গ্রাম ভারতের একটি ইউটিউব রাজধানী হয়ে উঠেছে?

  • খাদিজা আক্তার |
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

মানবিক রোবট : এক নতুন যুগের সূচনা

  • বর্ষা রানী দে|
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

হেলথকেয়ারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স : ভবিষ্যতের আশার আলো

  • অর্ণব মিত্র উৎসব|
  •  ২৩-০৬-২০২৫
ক্যাটাগরি: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

সর্বশেষ

সবচেয়ে পঠিত

মনে হচ্ছিল আমার কোনো অঙ্গহানি হয়ে গিয়েছে

মনে হচ্ছিল আমার কোনো অঙ্গহানি হয়ে গিয়েছে

  • সুরাইয়া সারমিন , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষন কথা বললাম

বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষন কথা বললাম

  • উসরাত জাহান নিতু , বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছিল

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছিল

  • ইমরান চৌধুরী , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

দিনটায় আমি নিজেকে সময় দিতে পেরেছি

দিনটায় আমি নিজেকে সময় দিতে পেরেছি

  • আশা আক্তার জুঁই , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
নাই নেট

আজকের জরিপ 01

আপনি কোন সাহিত্যিকের কবিতা বা রচনা রোমান্টিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করেন?