আমার পড়াশোনা ছিল চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে। ফলকে, ডায়েরিতে, সবখানে নামের নিচে লেখা থাকত : স্থাপিত ১৮৩৬। এ নিয়ে আমাদের মনে দেমাগও ছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী শতবর্ষী স্কুলটি বয়সে আমাদের স্কুলের চেয়ে সত্তর বছরের ছোট ছিল। তা নিয়ে আমরা হাসাহাসি করতাম। স্কুলের ১৭৫ এবং ১৮০ বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে প্রচুর ধুমধাম হয়েছিল। অনুষ্ঠানগুলোকে অনেকে প্রথম ধূমপান, কিংবা পানের উপলক্ষ হিসেবে নিয়েছিলাম। তিন-চারদিন ধরে সেসব অনুষ্ঠান হয়েছিল।
গুনতির হিসাবে একশ আশি সংখ্যাটি হয়তো তত বড় নয়। স্কুলে থাকতে এটা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাতাম এমন কিছু মনে পড়ছে না। একশ আশি টাকায় বিশেষ কোনো হাতিঘোড়া কেনা যায় না। তাছাড়া স্কুলের পরীক্ষায় ৮০০ বছর আগের বখতিয়ার খলজি, কিংবা ২০০০ বছর আগের সিন্ধু সভ্যতা নিয়ে ভাসা ভাসা লিখে আসতাম মুখস্থ। সেখানে ১৮০ কোন ছার।
অনেক পরে বুঝেছি, আরে একটা স্কুলের ১৮০ বছর সাধারণ কোনো কথা নয়। আমাদের স্কুলের প্রথম ব্যাচ তখন কীভাবে পড়ালেখা করত, কেমন ছিল ক্লাসরুম ও কেমন ছিল তখনকার জগৎসংসার? পৃথিবীতে তখনো টেলিভিশন, টেলিফোন দূরে থাক, টেলিগ্রাফও আসেনি। মোর্স সাহেব টেলিগ্রাফ আবিষ্কার করলেন তার এক বছর পর, সিনিয়র জুনিয়র সংক্রান্ত বিষয়াদি ততদিনে আমাদের স্কুলে এসে পড়েছে। স্কুলে দুটো ব্যাচ পড়াশোনা করছে।
সে আমলে স্কুলের সামনের রাস্তায় গাড়ির হর্নের শব্দে বিরক্ত হতে হয়নি। ইউরোপেই প্রথম মোটরগাড়িটি তৈরি হয় ১৮৮৮তে। টিফিনের শিঙাড়া ছুড়ে মেরে ক্লাসরুমের ইলেকট্রিক বাল্ব ফাটানোর সুযোগ ছিল না। এডিসন সাহেব নিকোলা টেসলার ভাত মেরে ইলেকট্রিক বাল্ব আবিষ্কারক যখন হলেন, ততদিনে স্কুলে চল্লিশের বেশি ব্যাচ পাস করে বেরিয়ে গেছে। প্রথম অন্তত অর্ধশতক নোট টোকা, পরীক্ষা দেওয়া কিংবা টেবিল ও বাথরুমের দরজায় আদিরসাত্মক গল্প লেখার জন্য বলপেন পায়নি। কারণ বলপেন পৃথিবীতে আসতে আসতে স্কুলের বয়স ৫২ বছর পার।
দুনিয়া কাঁপিয়ে দেওয়া মার্কসবাদ তখনো পয়দা হয়নি। সেটি আসতে আসতে আমাদের স্কুলে ১২টি ব্যাচ পার হয়ে গিয়েছে। স্কুলের জন্মের একুশতম বছরে এই উপমহাদেশের শাসনভার পাল্টায়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বণিক রাজাদের বিরুদ্ধে ১৮৫৭ সালে ঘটে উপমহাদেশের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ। তারপর দেশের শাসনভার সরে যায় মহারানি ভিক্টোরিয়ার কাছে।
গান্ধী, জিন্নাহ, নেহরু, প্যাটেল, কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এই ধারণাগুলোর অস্তিত্বই আমাদের স্কুলের জন্মের সময়। ১৯০৫-এ চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল নতুন পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের অংশ হয়। আবার ১৯১১-তে আগের প্রদেশে ফিরে আসে। এরপরে মানচিত্র পাল্টেছে একাধিকবার। দুটি বিশ্বযুদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয়টির সময়ে স্কুলে ক্লাস বন্ধ হয়। মিত্রশক্তির সেনাদের বুট খটখটায় মেঝেতে। কয়েক বছর স্কুলটি স্কুল থাকে না, ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে।
১৯১২ সালে প্রথম ডাইনোসর ফসিলটি খুঁজে পাওয়ার পর এই জন্তুটি মানুষের চিন্তা ও আলাপে কিছু জায়গা নেয়। তবে এই বিষয়ে আলাপ করার সুযোগই হয়নি স্কুলের অনেকগুলো ব্যাচের। এর মধ্যে পাস করে বের হয়ে না জানি কী করতেন আগের পঁচাত্তরটি ব্যাচের ছেলেরা।
আচ্ছা, সে সময় ক্লাসে কথা বলার জন্য শিক্ষক কী থাপড়াতেন। কূলকিনারা করে উঠতে পারি না। পৃথিবীটা কত ভিন্ন ছিল তখন। তখন থাপড়ালে কান লালের বদলে সবুজ, খয়েরি বা বেগুনি হতো হয়তো!
১৯০ বছরের চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল
আনন্দের রঙিন রাতগুলো : ২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবল
একটি ছোট্ট গ্রাম ভারতের ইউটিউব রাজধানী হয়ে উঠেছে
প্রযুক্তির উন্নয়নে গ্রাম থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পড়ালেখা
শাড়ি নিয়ে শিল্পীতে-অনুরাগীতে আলাপ
মনে হচ্ছিল আমার কোনো অঙ্গহানি হয়ে গিয়েছে
জীবন থেমে থাকে না, বরং অন্যভাবে গল্প শুরু হয়
বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষন কথা বললাম
কক্সবাজার ডিভাইন রোডের পউষী রেস্টুরেন্টে মোহাম্মদ ওমর ফারুক ও মহি উদ্দিন
দিনটায় আমি নিজেকে সময় দিতে পেরেছি